ঘুরে এলাম লাল কাঁকড়ার দেশে….
Published by Editor on
ঘুরে এলাম লাল কাঁকড়ার দেশে.....
- সায়নী সরকার
নতুন বছরের শুরুতেই হঠাৎ করেই সুযোগটা এসে গেলো। ঠিক করলাম কাছে কোথাও ঘুরে আসি। তবে এবার পছন্দের তালিকায় ছিল সী বিচ। কাছে বলতে দিঘা ছিল, কিন্তু দিঘা তে অনেক বার গেছি আর প্রচণ্ড ভিড় সেইজন্য ভাবছিলাম কোনো অফবিট জায়গা হলে ভালো হয়। তারপর ফেসবুকে একটু খোঁজা-খোঁজি করতেই জানতে পারলাম মন্দারমনি বিচ ক্যাম্প এর ব্যাপারে। সুতরাং দেরি না করে বুকিং করে নিলাম মন্দারমনি লাল কাঁকড়ার বিচ ব্যাকপ্যাকার্স ক্যাম্প। এটা দিঘা থেকে অনেকটাই দূরে, আগেই বলেছি অফবিট।
দক্ষিণ পুরুষোতমপুরের একটি গ্রাম মন্দারমনি, সমুদ্র সৈকত ও পিচাবনি মোহনার মাঝখানে অবস্থিত এই সমুদ্র সৈকত। এই সি বিচের এর মুখ্য বিষয় হলো লাল কাঁকড়ার কার্পেট যা অনেকখানি সমুদ্র সৈকত জুড়ে রয়েছে, যেই কারণে সমুদ্র সৈকতটি লাল কাঁকড়ার বিচ নামেও পরিচিত।
দিনটি ছিল সোমবার। সকালে উঠে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। হাওড়া থেকে দীঘা যাবার ট্রেন এ উঠে গেলাম, পৌঁছালাম কাঁথি স্টেশনে। সেখান থেকে অটো করে চলে এলাম চাউলখোলা বাস স্ট্যান্ড । আবার অটো করে মন্দারমনি বিচ ক্যাম্প। আপনারা চাইলে বাস এও যেতে পারেন, আবার স্টেশন থেকে ক্যাম্প পর্যন্ত সরাসরি গাড়ি ভাড়াও পাওয়া যায়।
প্রায় বারোটা নাগাদ পৌছে গেলাম ক্যাম্পে। ক্যাম্পে ঢোকার আগেই এক অসাধারণ দৃশ্য, দেখে ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। চারিদিকে শুধু বালি আর বালি কিছুটা দূরেই দেখা যাচ্ছিলো ছোটো ছোটো লাল কাঁকড়া। ক্যাম্পে ঢুকতেই আমাদের ওয়েলকাম ড্রিংকস (ডাবের জল)দিয়ে আপ্যায়ন করা হলো। তারপর উঠলাম আমাদের টেন্টে। এত সুন্দর ব্যবস্থা হবে ভেতরে অতটাও আশা করিনি। ফ্রেশ হয়ে এলাম লাঞ্চ করতে তখন প্রায় দুপুর একটা বাজে। খিদেও পেয়েছিলো সবার, অনেকটাই ভোরে বেরিয়েছিলাম আর রাস্তাতেও তেমন কিছু খাওয়া হয়নি। সেইজন্য দেরি না করে খেতে বসে পরলাম। খাবারে ছিল ভাত,ডাল,বেগুন ভাজা,তরকারি আর মাছ। এত আদর যত্নে খাবার পরিবেশন সত্যি খুব আন্তরিক লেগেছে।খাওয়ার পর্ব সেরে একটু বিশ্রাম নিয়ে প্রায় চারটে নাগাদ গেলাম বিচের এর দিকে।
জায়গাটি অত্যন্ত নিরিবিলি আর শান্ত। দিঘার মতোন অতো ভিড়ও নেই। নিজের সাথে সময় কাটানোর মতো এটা খুব ভালো পরিবেশ। ক্যাম্প থেকে ছোটো চেয়ার নিয়ে বিচে বসে আর ছবি তুলে সময় কাটিয়ে দিলাম। প্রায় সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ফিরে এলাম ক্যাম্পে টিফিন করতে। টিফিন এ চা আর পকোরা ছিল। শুরু হলো ক্যাম্প ফায়ারের প্রস্তুতি। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হলো ক্যাম্প ফায়ার, আর সাথে বারবিকিউ । আহা সে এক অসাধারণ কম্বিনেশন, তবে ক্যাম্প ফায়ার প্যাকেজের মধ্যেই ছিল কিন্তু বারবিকিউয়ের জন্য এক্সটা পে করতে হয়েছে।
সেইদিন ঠান্ডাও ছিল বেশ ক্যাম্প ফায়ার থেকে উঠতে ইচ্ছে করছিলো না। অনেকটা সময় ওখানে বসেই কাটিয়েছি।
তারপর রাত ন’টার দিকে সবাই মিলে বিচের দিকে গেলাম রাত্রে বিচটা আরো সুন্দর লাগছিল সে বলে বোঝানোর নয়। বিচ থেকে ফিরে এসে দেখি রাতের খাওয়া দাওয়ার পর্ব শুরু হয়েছে। খানিক বাদেই ডিনার শেষ করে চলে এলাম টেন্টে। ডিনারে ছিল রুটি, তরকারি আর চিকেন। ভাত ও ছিল কিন্তু আমি রুটি নিয়েছিলাম। ঠান্ডার জন্য ক্যাম্প থেকে ব্ল্যাঙ্কেট দেওয়া হয়েছিলো। টেন্টে থাকতে অসুবিধে হয়নি।
তারপর আস্তে আস্তে কেমন একটা নিস্তব্ধতা নেমে এলো চারিদিকে। শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক…. কেমন এক অচেনা জগত, জনসমুদ্র আর ব্যস্ততা থেকে অনেক অনেক দূরে। এইসব ভাবতে ভাবতেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি নিজেই জানি না। এক ঘুমে সকাল। বাইরে ঠান্ডা বাতাস বইছে, একটু চা খেয়ে সি বিচের দিকে গেলাম। হাটতে হাটতে অনেকটাই দূরে চলে গেছিলাম। পুরো বিচটা লাল কাঁকড়া তে ভর্তি ছিল। মনে হচ্ছিলো ওদেরি রাজত্ব।
এবার ফেরারপালা। ক্যাম্পে এসে ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পরলাম। প্রত্যেক বারের মতোন এইবারও আসতে ইচ্ছে করছিলো না কিন্তু কিছু করার নেই ফিরতেই হবে। তবে একটা কথা না বললেই না, ক্যাম্পের আতিথেয়তা সত্যি খুব ভালো। মনে হবে অনেক আগে থেকেই চিনি নিজেরই কেও। দুই একদিনের জন্য বন্ধু-বান্ধব , ফ্যামিলির সাথে ঘুরে আসার মতোন দারুণ জায়গা। সবাই একবার হলেও ঘুরে আসুন। আশা করছি ভালো লাগবে।
0 Comments