শিমলিপাল

Published by Editor on

শিমলিপাল

অরণ্য গাথা – দ্বিতীয় পর্ব :

কুসুমিত শিমলিপাল

– অর্ণব মাইতি

মন্ত্রমুগ্ধ

রাত নামছে শিমলিপাল এর গহীনে । ঘন মেঘে চাঁদ মুখ লুকিয়েছে।থেকে থেকে তীব্র ঝিঁ ঝিঁ ডাক ।কাল পেঁচার ভয়াবহ শিসের আওয়াজে বুকের ভিতর টা হিম হয়ে আসছে।গা ছম ছমে প্রেতপুরীর চাপ চাপ কৃষ্ণগহ্বর টর্চের আলো কে যেন শুষে নিচ্ছে । হঠাৎ একজোড়া জ্বলজ্বলে তীব্র  সবজেটে আলোর গোলক আমাদের পা গুলিকে থামিয়ে দিল। সঙ্গে থাকা বন বাংলোর কুকুরটাও নিদারুণ ভয়ার্ত স্বরে কুঁই কুঁই করতে  লাগল । সামনের পথ এগিয়ে গিয়ে বাঁ দিকে উঁচু মাটির ঢিবি তার দিকে বাঁক নিয়েছে ।ডান দিক বরাবর কুচিলা ,শিমুল,শিরীষ,গান্ডুলা গাছের সারি , তলদেশে পুটুস ও ঘেঁটুর দুর্ভেদ্য ঝোপ। কেয়ারটেকার কাম কুক শিবু বারবার বারণ করেছিল, শেষে সাবধান করে বলেছিল ,” যাবেন তো যান তবে বেশি দূর যাবেন না ,সাপের উপদ্রব আছে।” মরা চাঁদের আলো যেন মায়ার ফাঁদ পেতেছে, বুনো ফুলের গন্ধে শির শিরে কুয়াশামাখা ঠান্ডা বাতাসে ঝরাপাতা বিছানো পথ যেন এক অলীক কুহকিনীর মত আকর্ষণ করছে। টর্চের আলো ফেলতেই  ঝরা পাতাগুলো নাইটজার পাখি হয়ে রাস্তার দু’ধারে ছিটকে যাচ্ছে। আমাদের জংলি মনগুলো জ্যোৎস্না ভেজা বসন্ত অরন্যের আদিম ফাঁদে রাহু তাড়িত হয়ে জাটিঙ্গার পাখিদের মতন মরণ আলিঙ্গনে ছুটে চলেছে। বোঝেনি জঙ্গলের একটি নির্দিষ্ট আইন আছে,লঙ্ঘন করলে তার আদালতে মৃত্যু নিশ্চিত । নিশাচর ল্যাপ উইং বা পিউ কাঁহা স্তব্ধ  হয়ে গিয়েছে। আচমকা কোনো এক বিভীষিকার নিঃশব্দ পদচারণায় প্রকৃতি যেন সেই আধিভৌতিক আলো-ছায়ায় নির্বাক। বুঝিলাম মৃত্যুর সমন এসেছে। টর্চ জ্বালালাম। সবুজ বর্ণ মুহূর্তে অঙ্গার এর মত কালচে লাল হয়ে জ্বলে উঠলো। কিন্তু ওই দুর্ভেদ্য পুটুস ঝোপে কোন প্রাণীর অবয়ব দেখতে পেলাম না। কুকুরটাও ভয়ে আরো গা ঘেঁষে দাঁড়ালো। ভয়ঙ্কর চোখ দুটি  আমাদের চোখে চোখ রেখে নিঃশব্দে পিছতে লাগল ।আমরা টর্চ জ্বালিয়ে স্থবির স্থানুবৎ।  হৃদকম্প ক্রমবর্ধমান। এবার কি লাফ দেবে? মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোকে কিছুটা স্বস্তি দিয়ে ধীরে ধীরে ঝোপের আড়ালে মিলিয়ে গেল চোখ দুটি। একবার জঙ্গলের অনাহুত ভ্রমণবিলাসীদের অরণ্যের আদিমতার সহবত শিখিয়ে দিয়ে গেল।আমরাও টর্চ জ্বেলে সামনে চোখ রেখে এক পা এক পা করে পিছোতে লাগলাম । যেন কত দীর্ঘ পথ। আবার চাঁদ রাহুমুক্ত হয়ে মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো, আবার রাত চরা পাখিরা তার সুর-তাল-লয় মাধুর্য মেলাতে শুরু করল আর আমরাও এক দৌড়ে চৌহদ্দির মধ্যে ঢুকে শেষ নয় ! দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলতে শুরু করলাম। দেখি বাসবদা আম্রমঞ্জুরীর ম ম গন্ধে জ্যোৎস্না ভেজা কুয়াশা মাখা বাংলোর খোলা আঙ্গিনায় ঝরা পাতায় মচমচ শব্দ করতে করতে গুনগুন করছে “জীবন ও মরণের সীমানা ছাড়িয়ে”।

কুসুমিত শিমলিপাল

বাস্তবিকই গতবছরের প্রকৃতির রং বন্ধন বসন্তের আগমনে প্রাণে কুসুমিত হলো। আমরা আবার একত্রিত হলাম হাওড়া স্টেশনে – অনির্বাণ, অভিজিৎ, পথিক দা, অর্ণব সঙ্গে নতুন সংযোজন বাসব দা। এবছরের গন্তব্য ময়ূরভঞ্জ রাজাদের শিকার ক্ষেত্র শিমলিপাল অভয়ারণ্য। DFO এর কাছ থেকে অনুমতি আদায়ে বহু বাধা এল, বিশেষ করে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ার ভয়ে  বেশ কয়েকজন সরে দাঁড়াতে বাধ্য হল। কিন্তু গন্তব্য স্থির ,লক্ষ্য ময়ূরপঙ্খী রং মশাল শিমলিপাল। তবে মশাকে তো অস্বীকার করা যায় না তাই আমরা কিছুদিন আগে থেকে শুরু করলাম ক্লোরোকুইনাইন এর কোর্স। যশবন্তপুর এক্সপ্রেস রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ পৌছে দিল বালাসোর স্টেশনে। স্টেশনের কাছেই হোটেলে রাত্রি বাস।

সকালে প্রাতরাশ সেরে সাড়ে নটা নাগাদ বালাসোর বাস স্ট্যান্ড থেকে বারিপদা গামী বাসে উঠে বসলাম শিমলিপাল এর উদ্দেশ্যে। বেলা এগারোটা নাগাদ বারিপদায় পৌছালাম। প্রথমে গাড়ির খোঁজ, তারপর চারদিনের রেশন ও জলের আয়োজন এবং শেষে মধ্যাহ্নভোজন সেরে সংগ্রহ করতে যেতে হলো জঙ্গল প্রবেশের অনুমতি পত্র। তবে জঙ্গলের মধ্যে চারদিনের রাত্রিবাস এর অনুমতি পত্র যাত্রার আগে থেকেই DFO অফিস থেকে এসে গিয়েছিল।

 কিন্তু সময় যে কত অমূল্য তা তো বুঝিনি। বারিপদা থেকে প্রায় 21 কিলোমিটার দূরে যখন শিমলিপাল এর পিঠাবেটা প্রবেশদ্বারে পৌছালাম। তখন বিকেল পাঁচটা। এখন জঙ্গলে প্রবেশ নিষিদ্ধ ।যথারীতি অনুনয়-বিনয়,কিন্তু চিঁড়ে ভিজলো না। জঙ্গল সর্বদা  তার নিজের নিয়মে চলে ,তার অধিবাসীরা এসময় নিশ্চিন্তে রাস্তায় বের হয়, সভ্য জগতের গাড়ির শব্দ এ সময় তাদের কাছে অসহ্য। অগত্যা জিপের ছাদে চাপানো মুরগিদের একদিনের অতিরিক্ত জীবন দান। জিপ নিয়ে বেরিয়ে এলাম লুলুং এর পথে, এখানেও বনবিভাগের একটি যাত্রী নিবাস আছে। অবশ্য এটি Outer Area। আর এক অদ্ভুত নদী আছে। নাম পলপলা। যার প্রতিটি পল মনের ভেতর জমে থাকা কঠিন সংগ্রামের আস্তরনে পেলব প্রলেপ দিচ্ছে, যার ছোঁয়ায় কৃত্রিম আস্তরণ খসে পড়ে এক স্বাভাবিক ছন্দে মিশে যাই আদিবাসীদের প্রাণবন্ত সাপ্তাহিক হাটে। রংবেরঙের সাজ-সামগ্রী, ক্ষেতের টাটকা সবজি, রঙিন কাপড় সজ্জা, সস্তা প্রসাধনী, মাতাল মহুয়া রসের হাড়ি আর হাঁড়িযার গন্ধের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে মেয়েদের মাথার  করৌঞ্জ ফুলের তেলের গন্ধ, মিলে যায় মাদলের তালে  পলাশ ফুলের বিছানো সজ্জায় রবির অস্তরাগের আলাপ।

শিমলিপাল

পরদিন ভোরবেলা শিমলিপাল এর পিঠাবেটা প্রবেশ দ্বারে পৌঁছে ছাড়পত্র পেলাম শিমলিপাল এর অন্তরমহলের। পিয়াশাল,শিমূল, মহুয়া,কুঁচিলা,কুসুম কুয়াশা জড়ানো সকালে অতিথি বরণ করলো। জানা-অজানা নানা পাখির সুমিষ্ট কুঞ্জন ,জংলি পাতার ঝিরঝিরে ফিসফিসানি,আকাশিরঙ্গা প্রজাপতিদের অনাবিল ওড়াউড়ি আমাদের সাদর আহ্বান জানালো। ছোট ছোট লালচে টিলা,সরু  নালার লালচে জলস্রোত,  ইতি উতি উইঢিবির লালচে  কারুকার্য, খাদের পাশের লালচে কাঁকুরে আবছায়া পথরেখা আমাদের রক্তিম আলিঙ্গন করলো। ল্যান্টেনা,রঙ্গন ,পুটুস ও ঘেঁটু ফুলের অকৃত্রিম সজীব জংলি গন্ধ গাড়ির ডিজেলের গন্ধ ভেদ করেও শিমলিপালের গায়ের আঘ্রান দিচ্ছিল। প্রত্যেক শরীরের মতন প্রত্যেক জঙ্গলের ও এক অপূর্ব নিজস্ব গন্ধ আছে যা মনের মধ্যে এক শিহরণ, এক হিল্লোল,এক উন্মাদনা তোলে যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বহিঃসত্তার মাধ্যমে অন্তততম অনুভূতি স্তরে প্রবেশ করে। এর মধ্যে আমরা লুলুং নদীর ব্রিজ পেরিয়ে ভজন চেকপোষ্টে পৌঁছেছি। পুনরায় একপ্রস্থ পারমিট আদান প্রদানের পর অন্দর থেকে অন্দরতর অংশে প্রবেশ করলাম। একটি রাস্তা অবশ্য নওয়ানা গেস্ট হাউস এর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন ।এটিও পলপলার মতন বহিঃ অংশ এর এক সুন্দর বনবাংলো।

সকাল আটটা নাগাদ পৌছালাম শিমলিপাল এর অন্যতম কোহিনুর জোরান্ডায় ।জোরান্ডা শব্দটি এসেছে ‘জাউ রান্ধা ‘ থেকে ।পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে যে ভোগ রান্না করা হয় তার নাম জাউ । পৃথিবীর সর্ববৃহৎ জাউ বা ভোগ নাকি এই বিশাল গহবরে আগে রান্না করা হতো তাই এই অঞ্চলের নাম ‘জাউ রান্ধা ‘ বা জোরান্ডা  । জোরান্ডা বন বাংলা থেকে প্রপাতের আওয়াজ শোনা যায় কিন্তু দেখা যায় না কারণ প্রপাতের ঠিক উপরে বন বাংলোটি অবস্থিত । বুড়িবালাম নদীর অন্যতম প্রধান উৎস এই জলপ্রপাত। এই প্রপাতের বিপরীত গিরিখাদের দেওয়াল সম্পূর্ণ খাড়াভাবে তলদেশের অন্ধকারে হারিয়ে গেছে তবে পর্যটকদের জন্য ঠিক উল্টোদিকে রেলিং দিয়ে প্রপাত দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মাননীয় বুদ্ধদেব গুহ মহাশয় এর জংলি লেখনি বারবার আমাকে জোরান্ডার স্বপ্ন দেখিয়েছে। আজ সেই পৃথিবীর আদিমতম গিরিখাদের সবুজ অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে এই সকালেও  বুকটা ছম ছম করে উঠলো। ওপর থেকে  জলপ্রপাতের ধারা গহবরের আদিমতম অন্ধকারে কুহেলিকার মধ্যে যেন মিশে যাচ্ছে। অজস্র সবুজ টিয়া গহবর এর তলদেশ থেকে আলোর অভিমুখে ছুটে আসছে যেন কি বার্তা নিয়ে। মুখ ফিরিয়ে দেখি অনির্বাণ এর ক্যামেরা একটি কুসুম গাছের লালচে আগুন পাতার ঝোপে  একটি হলুদ বসন্ত বৌরি দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে,অদূরে  উজ্জ্বল রঙিন পোশাকে সজ্জিত বাথুরি সমাজের আদিবাসী দল গাছের তলায় একটি কালো পাথরের সামনে করজোড়ে  বসে নতুন গামছা পেতে বুনো রংবেরং ফুল বিছিয়ে দিচ্ছে। প্রত্যেকের কপালে সিঁদুর ও হলুদে মাখামাখি ।দোল পূর্ণিমায় এত বড় রং মিতালী আর কোথায় মিলবে? গন্তব্য হয়তো একটা আছে কিন্তু প্রতি মুহূর্তে বিচিত্র যাত্রাপথে থমকে দাঁড়ানো এই রঙিন উপলব্ধিগুলি তো সব থেকে বড় প্রাপ্তি ।

পথে নেমেছি আর তো থামার উপায় নেই। জোরান্ডার বনবাংলা ভগ্ন প্রাপ্ত হওয়ায় আমাদের রাত্রিবাসের অনুমতি মেলেনি। এগোলাম আমাদের আজকের রাত্রের আশ্রয়স্থল বরেহাপানি বন বাংলোর অভিমুখে।

সমগ্র অরণ্যকে সবুজ ও সজীবতা দান করেছে

শিমলিপাল উড়িষ্যা রাজ্যের ময়ূরভঞ্জ জেলায় অবস্থিত ভারতের সপ্তম বৃহত্তম ব্যাঘ্র সংরক্ষিত জাতীয় অরণ্য।  শিমলিপাল এর ক্ষেত্রফল 2750 বর্গ কিলোমিটার ,এর মধ্যে গহীন অংশ হলো 303 বর্গ কিলোমিটার। এর সংলগ্ন  আরও দুটি অভয়ারণ্য হলো হাদগড় (192 বর্গ কিলোমিটার ) এবং কুলডিহা (273 বর্গ কিলোমিটার)। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই মালভূমি অধ্যুষিত অরন্যের গড় উচ্চতা 900  মিটার। শিমলিপালের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ  খৈরিবুরু (3300 ফুট) ও মেঘাসিনি(3822 ফুট)। সমগ্র অরণ্যকে সবুজ ও সজীবতা দান করেছে বুড়িবালাম ,খৈরী,সালান্ডি, পলপলা,লুলুং নদী ও তাদের শাখা ও উপনদী ।সমগ্র অরণ্যভূমির বহিঃঅংশে মুন্ডা ,খাদিয়া, হো, সাঁওতাল ইত্যাদি অরণ্যচারীদের ছোট ছোট বসতি ও  চাষাবাদের খেত চোখে পড়ে।

শিমলিপাল এর প্রাণপুরুষ অরণ্যপ্রাণ সরোজরাজ চৌধুরি। উনি শিমুল গাছের প্রাধান্য যুক্ত  শিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফাউন্ডার ডাইরেক্টর এবং প্রথম ফরেস্ট কনজারভেটর। প্রথম পাগমার্ক এর সাহায্যে শিমলিপালের ব্রাঘগণনা উনিই শুরু করেন। তিনি এক আহত বাঘিনীকে পোষ্য নিয়েছিলেন । শিমলিপাল এর মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া তাঁর এক অতি প্রিয় নদীর নাম অনুসরণে তার নাম রেখেছিলেন খৈরী। শুধু বাঘ নয় উনি অনেক আহত বন্যপ্রাণী কে  তার বাংলার কাছাকাছি রেখে আজীবন সেবা করেছিলেন ।উনার এই অসাধারণ মননশীলতা ,প্রকৃতির প্রতি তাঁর আত্মনিবেদন কে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে ভারত সরকার 1983 সালে তাঁর এই কৃতী সন্তান কে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত করে ভারতবর্ষের প্রতিটি অরণ্যভূমিকে গর্বিত করেছে ।

বরেহাপানি বনবাংল

শাল,সেগুন,শিরীষ ,কুসুম ,মহুয়ার দুর্ভেদ্য জঙ্গল ভেদ করে বেলা প্রায় এগারোটা নাগাদ আচমকা থমকে দাঁড়াল আমাদের বাহন। সম্বিত ফিরল ।চোখের সামনে ভেসে উঠলো বরেহাপানি বনবাংলা। প্রথম দৃষ্টিতেই প্রেম নিবেদন। কম্পাউন্ড জুড়ে আম গাছের ছড়াছড়ি। এত মুকুল এসেছে যে পাতা প্রায় দেখাই যায় না। গন্ধে চারিদিক ম ম করছে। এছাড়াও আছে অশ্বত্থ, বট ,কালোজাম, ফলসা,নাগকেশর ইত্যাদি। পুরো কম্পাউন্ড  ঝরাপাতার কার্পেট দিয়ে মোড়া ।মাঝে  সাদা রঙের দু’কামরার বন বাংলা। কড়ি বরগার ঘরগুলি বেশ পুরাতন ও জীর্ণ  ।সামনে একটি ছোট্ট বারান্দা। সেখানে বেশ কয়েকটি জীর্ণ আরাম কেদারা। বাথরুমের অবস্থাও তথৈবচ ।দরজায় বুনো ইঁদুরের কাটা গর্ত পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। একটু তফাতে টালি ও কাঠের ছাউনি দেওয়া জ্বালন ঘর এবং সঙ্গে রান্নাঘরও বটে। তবে বাইরের দিকেও গর্ত খুঁড়ে দু’খানি মাটির উনুন করা আছে।এর চারিপাশ সুন্দর করে গোবর দিয়ে নিকানো । জ্বালন ঘরের সামনে দুই খানি তক্তা দিয়ে বেঞ্চের মতন করা হয়েছে। এটাই ডাইনিং টেবিল।এই ধরণের বেঞ্চ কম্পউন্ডের চারিদিকে বেশ কয়েকটি আছে  ।অযত্নের ছাপ স্পষ্ট হলেও পুরো পরিবেশটা বন্যতার পরিপন্থী নয়।

সবুজ শান্ত তপোবন

এক অপূর্ব আদরমাখা সবুজ শান্ত তপোবন। কম্পউন্ডের সামনে একটি চমৎকার বাঁধানো কুয়াতলা। অভিজিৎ জল টেনে তার সারা দিনের সমস্ত ক্লান্তি ধুয়েমুছে সাফ করে নিচ্ছে। শান্তিনিকেতনের পাঠভবনের ছাত্র পথিকদা আরামকেদারায় গা এলিয়ে উদাস হয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে সম্ভবত তাঁর ছাত্র জীবনের দিনগুলির কথা ভাবছে ।মাতাল বসন্তের রঙিন প্রকৃতির রূপরসকে অনির্বাণ ফ্রেমবন্দি করে চলেছে। আর বাসবদা মশা মারার স্প্রে নিয়ে বাথরুমে ও ঘরে ‘মশা হটাও’ অভিযানে সামিল। সামনের মাটির উনুনে মাটির হাঁড়ি তে ভাত বসেছে। কেয়ারটেকার শিবুর সঙ্গে একটি ছোট ছেলেও আছে। ছেলেটি উনুনে জ্বালন দিচ্ছে।

ফাগুন হাওয়ায় কুসুম, শিমুল, পিয়াশাল, রঙ্গনের পাতার দোলায় যেন উড়ে যাচ্ছে রক্তিম আবির। মাঝে মাঝে তীব্র চিৎকারে এক গাছ থেকে অন্য গাছে ভেসে যাচ্ছে সবুজ আবির উড়িয়ে টিয়ার ঝাঁক  ।কুঁয়াতলায় বসে থাকতে থাকতে দেখি আমার সর্বাঙ্গে হলদেটে সবুজ সজনে পাতার আশীর্বাদ। সামনের আতা গাছের ডালে একজোড়া ছুটকি কুঁচিলা খাঁই। অবশ্যই উড়িয়া নাম ,আসল নাম Lesser Hornbill । কুঁচিলা গাছের ফল খেতে ভালোবাসে বলে এদের এমন নাম। Greater Hornbill এর নাম বড়কি কুঁচিলা খাঁই ।

সর্বাঙ্গে হলদেটে সবুজ

দুপুরে শিবুর হাতের মুরগির ঝোল ও ভাত অমৃতসম মনে হল। মধ্যাহ্নভোজন এর পরপরই শিমলিপাল এর বনবিভাগের একজন কর্মী এলেন ম্যালেরিয়ার ওষুধ নিয়ে। বারবার জঙ্গলের জল খাওয়া আর নদী বা ঝর্ণার জলে স্নান করতে বারণ করে গেলেন। মাত্র বছরখানেক  শিমলিপাল জঙ্গলে পোস্টিং পেয়েছেন অবশ্য এর মধ্যেই সৌভাগ্যক্রমে মাত্র দুবার ম্যালেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। আমরা আশ্বস্ত করলাম। ক্লোরোকুইনাইন এর ডোজ নিচ্ছি দু তিন দিন আগে থেকেই। সঙ্গে আছে পর্যাপ্ত মিনারেল ওয়াটার , আছে মশা নিধনের মলম,স্প্রে, কচ্ছপ ধুপ ইত্যাদি সভ্য মানুষের জংলি হওয়ার যাবতীয় উপকরণ। বন্যতা আমাদের শরীরের কোষে কোষে জীবনস্বত্তায় সম্প্রসারিত। আমাদের আদিম পুরুষ বংশপরম্পরায় রিলে রেসে তার বাটনটি আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। কিন্তু সভ্যতার কৃত্তিমতার পরশে প্রকৃতিপ্রদত্ত জংলি জল বা অন্য কোনো সম্পদে আমাদের আর কোন অধিকার নেই। অথচ শিমলিপাল এর অরণ্য আদিবাসীদের আছে, কারণ তারা কোনো অবস্থাতেই অরণ্য মাকে ছেড়ে যায়নি। এই অরণ্য তাদের প্রতিপালন করেছে ।তারা প্রকৃতই অরন্যের সন্তান। তাই অরণ্যের জল ওদের কাছে পূর্ণতোয়া, আমাদের কাছে বিষাক্ত।

“বাবু… চা….”, শিবুর ডাকে ঝটকা লাগে। বসেছিলাম বাংলোর পিছন দিকে একটি মহুয়া গাছের নিচে লাগানো কাঠের বেঞ্চে। দেখি মচমচ শব্দ তুলে পথিকদা এগিয়ে আসছে “চলো, একটু ঝর্নার দিকে যাই। “

বরেহাপানির উড়িয়া নাম বড়াইপানি। জলপ্রপাতের নামেই শিমলিপাল এর এই জায়গার নাম। প্রপাত টি সোজা নিচের দিকে নেমে গিয়েছে। আমরা খাদ এর অপর প্রান্তে। এখানে একটি ভগ্নপ্রায় ওয়াচ টাওয়ার আছে। এখন প্রপাতে জল কম কিন্তু অপূর্ব তার প্রকাশভঙ্গি। চারিদিকের প্রকৃতিতে শেষ বিকেলের এক অপূর্ব মাদকতা। ডালে ডালে ঘরে ফেরা পাখিদের একটানা কিচিরমিচির শব্দ। লাল টুকটুকে বলটি মহুয়ার জঙ্গলে খাদের প্রান্তে বড়াই পানির জল উচ্ছ্বাসে আমাদের চোখে মুখে মুঠো মুঠো লাল আবির ছড়িয়ে দিতে দিতে জঙ্গলে হারিয়ে গেল।

পথিক দা ও বাসব দা মহুয়া ফুল, ধাতুপ ফুল কুড়িয়ে স্বাদ গ্রহণে ব্যস্ত। আমরাও তাদের সঙ্গী হলাম।শিবু বলল ওই ময়না গাছগুলির জঙ্গলের পাশে ঢিবি গুলিতে ভালুকের বাস আছে। আমি অবশ্য ওই ময়না গাছগুলিকে শিমুল গাছ ভেবে ভুল করেছিলাম।বেশ কিছু হাতির বর্জ চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে । শিবু বললো এগুলি কাল রাতের ।দশ বারো জনের হাতির পাল এসেছিল । এবার বিদায়ের পালা। আর একবার বড়াই পানি প্রপাতের  দিকে তাকালাম। গা ছমছমে আঁধারে প্রকৃতির বুকে শ্বেত শুভ্র জীবনরেখা ,একটানা প্রপাতের শব্দে ভালোবাসার আকুতি। তাই যেন কবি সত্যেন্দ্র আচার্য বলেছেন।

“শুধু ভালোবাসার অর্থ

ঋজু ঝর্ণার জলে

লেখা আছে।”

সন্ধ্যায় জ্বালন ঘরের সম্মুখে বসে  লিকার চায়ের আড্ডা। শিবু এই বাংলার কেয়ারটেকার হলেও কখনো একা থাকে না। তবে মেহেমান এলে ওকে থাকতেই হয়। এটা নাকি ভূত বাংলো নামে পরিচিত। এখান থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ওদের বসতি। শিবু হো সম্প্রদায়ের আদিবাসী ।অপদেবতায় বিশ্বাসী।রান্না চড়াতে চড়াতে অনেকক্ষন আলাপ করলাম তাঁর সঙ্গে ।তাদের গ্রামের কথা, তাদের উৎসবের কথা। কদিন বাদেই ওদের গ্রামে বরামদেও পুজো হবে।বারিপদা, জশিপুর থেকে ওদের আত্মীয়-স্বজনরা গ্রামে ফিরবে ।মাদল বাজবে। শিঙা বাজবে ।সারারাত হ্যাজাকের আলোয় তালে তালে নাচ গান হবে। একসঙ্গে বসে শুয়োরের মাংস , মহুয়ার রস ও হাঁড়িয়া খাওয়া হবে। কত ছোট ছোট আশা আনন্দের দোলা। যা আমাদের সবজান্তা আইফোনে মোড়া সভ্যতাকে জানান দেয় খুশির হদিস ,প্রাণের স্পন্দন। কথায় কথায় জানলাম বরামদেও হল জংলি জানোয়ার ,ভূত-প্রেতের দেবতা। তারা সমবেতভাবে প্রার্থনা করে জংলি জানোয়ার যেন তাদের আঘাত বা ক্ষতি না করে, বুনো হাতি ,হরিণ ,সজারু, ভল্লুক, টিয়া যেন তাদের ফসল কে ধ্বংস না করে, কোন ডাইনি যেন তাদের কোনো প্রিয়জনকে কেড়ে না নেয়। সেই আধিভৌতিক টিম টিমে আলোয় জঙ্গলের মাঝে বসে মনে হচ্ছিল কতই না বিচিত্র এই ভারত বর্ষ।

গরম চায়ে চুমুক

শিবু আমাকে সুপারির মতন ফলসারঙা গোল গোল ফল দিলো, বললো বিছানার নীচে রেখে দিতে , ছারপোকা কামড়াবে না ।

আমি বললাম,”এ গুলো কি ?”

শিবু বললো “এগুলি অর্গুন ফল,রান্না ঘরের পিছনে এর ঝোপ আছে । ছারপোকার যম । আমিও বাড়ি নিয়ে যাই ।”

আমরা ওর একদিনের অতিথি । তবুও ওর আন্তরিকতা মুদ্ধ হলে গেলাম ।

রাতে বাংলোর বারান্দায় চলল আড্ডা, গান, তর্ক বিতর্ক। মশার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আয়োজন। মশারি নিয়ে দড়ি টানাটানি। বিজলী আলোয় অভ্যস্থ চোখে মোমবাতির আলোয় ধেড়ে ইঁদুরের সঙ্গে রেশন বাঁচাতে ছোট ছুটি। অতঃপর ক্যান্ডেললাইট ডিনার খেয়ে  শিবুর বাধা অগ্রাহ্য করে মুনলাইটের নৈশ অভিযান। যার শোচনীয় পরিণাম সূচনাতেই লিপিবদ্ধ ।

চলল আড্ডা, গান, তর্ক বিতর্ক

পাখির কলতানে বড়াইপানিতে ভোর এল। কোমল মিহি কুয়াশামাখা আলোর রেশ পড়েছে আম্রমঞ্জরীতে ,ঝরা পাতায়,সবুজ ঘাসে, পিয়াশাল কুসুম পলাশ শিমুলের ডালে ডালে। আদিগন্ত কুয়াশার মাকড়সার জালকে ছিন্ন ভিন্ন করে উদীয়মান সূর্য রাতের ভয়াবহতাকে মুছে দিল। আদুরী রোদে চলল বড়াইপানি কে একপ্রস্থ ফ্রেমবন্দী করার প্রয়াস। বাংলায় ফিরে শিবুর তৈরি করা চমৎকার জলখাবার উদরস্থ করে ,পুনরায় গাড়িতে রেশন ,জল ও অন্যান্য জিনিসপত্র তুলে  বড়াইপানিকে মনের অন্তঃস্থলে স্মৃতির পাতায় বন্দি করে এগিয়ে চললাম চাহালার উদ্দেশ্যে।

সকালের আলোয় রাতের সেই ভয়াবহ জঙ্গলের সঙ্গে পরিচয় ঘটল। কালচে সবুজ নিশ্ছিদ্র জঙ্গল যেন আদিবাসী রমনীর করৌঞ্জ তেল মাখা  চুলের মতন সুগন্ধি,ঘন ও ঠাসবুনোট। বড় বড় গাছগুলিকে আলিঙ্গন করে ঝোপগুলি যেন দেওয়ালের মত দুপাশে দাঁড়িয়ে আছে ,যেখানে দিনের আলোতে ও চোখের দৃষ্টি বড় অসহায়। প্রায় মাইল খানেক যাওয়ার পর বনভূমি কিছুটা পাতলা হয়ে এলো। আবার পাকদণ্ডী শুরু হল। একদিকে কালো কালো গ্রানাইটের পাহাড়, অন্যদিকে গিরিখাত। কালো পাথরের পটভূমিতে প্রচুর হলুদ ফুলের সমাহার দেখা গেল। ড্রাইভার জানালো ওগুলি গোলগুলি ফুল। দেখতে অনেকটা ছোট ছোট সূর্যমুখীর মত। এরপর যথারীতি উৎরাই। মেঘের মতো নীল নীল পাহাড়, গভীর উপত্যকা ,ছোট ছোট নালা আর মাঝে মাঝে সবুজ তৃণভূমির বিস্তার। তৃণভূমির মাঝে চোখে পড়ে মাচার উপর শস্যের গোলা।  অদূরে ছোট ছোট ক্ষেত,জলাশয়। বাঁশঝাড় ,সজনে, আম, বট, মহুয়া,শিমূল গাছের কোল ঘেঁষে পর্ণকুটির এর সমাহার।

এগিয়ে চললাম চাহালার উদ্দেশ্যে

এক জায়গায় দেখলাম কিছু আদিবাসী মানুষের জটলা। মনে করেছিলাম হাট বসেছে। দেখলাম মানুষজন একটি বড় অশ্বত্থ গাছের গুড়ি চারিদিকে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে প্রদীপ, ধূপধুনো জ্বালিয়ে নতুন জামা কাপড় পরে পুজো করছে। পূর্ণিমা যেমন অন্যান্য হিন্দু ধর্ম সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত পবিত্র দিন। সত্যনারায়ন সহ বহু পুজো ঐদিন হয়ে থাকে। সেরকম আদিবাসীদের কাছেও এই দিনটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। জানতে পারলাম ওরা টোটেম পুজো করছে। এই অরণ্যচারী দের কাছে দেবদেবীর কোন বিগ্রহ নেই। প্রাচীন গাছের কান্ড, ফোকর বা গুহার ভিতরে কোন পাথর এদের আরাধ্য দেবতা। মধ্যপ্রদেশের পাঁচমারি তেও তাই প্রতিটি গুহাতে চোখে পড়েছিল সিঁদুরের প্রলেপ, শুকনো ফুল ,কালো তেল চিটচিটে প্রদীপ ,আধপোড়া ধুপ। কোন নিরাকার ব্রম্ভ বা সাকার মূর্তি নয় এই অরণ্য পর্বতচারিরা সর্বদায় বিশ্বাস করে অনন্য প্রাকৃতিক শক্তিকে যা তাদের টোটেম বা বিগ্রহ।

বেশ কিছুটা এগিয়ে আবার বিস্তীর্ণ তৃণভূমি। দূরে নীল নীল পাহাড়ের সারি। এই রাস্তার দু’ধারে তালগাছের মতো এক রকম গাছ চোখে পড়ল ।পাশেই কয়েকটি কুঁড়েঘর ।এখানেও কিছু লোকের জটলা ।কয়েকজন হাড়ির মধ্যে কিছু বিক্রি করছে। ভাবলাম এটা হয়তো  মহুয়ার রস বা হাঁড়িয়া। কিন্তু লোক গুলো বলল এটা হচ্ছে সালফি,অনেকটা তালগাছের তাড়ির মতো জিনিস। আর ওই তালগাছের মতো দেখতে গাছগুলি হল সল্লপ গাছ। ওই গাছগুলি থেকেই  তাল বা খেজুর গাছের মতন চেঁচে ওরা রস বের করে। একেই বলে সালফি,যা খেলে নাকি মহুয়ার রস বা হাঁড়িয়ার থেকেও অনেক বেশি নেশা হয়।

হঠাৎ সামনের  একটি আকাশবাণী গাছের দিকে তাকিয়ে কয়েক জন চিৎকার করে উঠল “নেপা মুসা,নেপা মুসা “। তাকিয়ে দেখলাম বাদামি রাঙ্গা এক বিশাল জায়েন্ট মালাবার স্কুইরেল। প্রাণ ভয়ে দ্রুত পাতার গভীরে হারিয়ে গেল । একের পর এক দমকা গরম বাতাস ভেসে আসছে। শুকনো পাতা, লাল ধুলো ,ঝরা ফুল ঘুরতে ঘুরতে জঙ্গলে মিলিয়ে যাচ্ছে। গন্তব্য তো আছেই কিন্তু গন্তব্য এর মাঝে এই ছোট ছোট পাওনাগুলো কিন্তু খুব অল্প নয়।

পুনরায় জঙ্গল ঘন হয়ে উঠলো। চকিতে দেখা হয়ে গেল বুনো শুয়োরের দল। প্রত্যেকের হাতে উঠে এল ক্যামেরা। তবে জঙ্গল এত ঘন হয়ে উঠলো আর বড় বড় গাছের নিচে এত ল্যান্টেনা ও পুটুসের ঝোপ যে দিনের বেলাতেও সামনের সরু লাল কাঁকুরে  রাস্তা ছাড়া দৃষ্টি প্রায় অগম্য। বুঝলাম শিমলিপালের চাহালা রেঞ্জে ঢুকে পড়েছি। একটা বাঁকে চিতল হরিনের ঝাঁক চোখে পরলো। নিমেষে অপসৃত হল। উজ্জ্বল বর্ণের বনমোরগগুলি মাঝে মাঝেই গাড়ির আওয়াজে রাস্তা থেকে উড়ে গাড়ির সামনে দিয়ে ঝোপের আড়ালে চলে যাচ্ছে। পুনরায় একটা বাঁক নিয়ে নিবিড় অরন্যের মাঝ দিয়ে সোজা মাইল দুয়েক গিয়ে  ডানদিকে বাঁক নিতেই চোখে পরলো চাহালা বাংলোর চেকপোস্ট ও এন্ট্রি পয়েন্ট।

অনেকটা জায়গা জুড়ে বড় বড় গাছ দিয়ে ঘেরা কাঁটাতারে মোড়া সুসজ্জিত চাহালা বনবাংলা। বরেহাপানি বন বাংলো যদি বন্যতার প্রতিমূর্তি হয় তবে চাহালা বনবাংলো অবশ্যই অনেক আধুনিক ও সুবিন্যস্ত। সুদৃশ্য ইটের বাহারি রাস্তা।রাস্তার ধারে ধারে এবং পুরো কম্পাউন্ড জুড়ে সুদৃশ্য সোলারের বাতিদান ।  আধুনিক কিচেন সহ সুদৃশ্য পরিছন্ন বাংলো।বোগেনভেলিয়ার বাহারি ফুল সজ্জা এবং যত্ন করে সাজানো আধুনিক ফুলের বাগান। প্রতি বৃক্ষের গায়ে পরিচয় পত্র। একটি ত্রিতল ওয়াচ  টাওয়ার। বন্য পশু ও হাতি দেখার জন্য মাটির নিচে আন্ডার পাস। মাঝেমাঝেই বসার জন্য সুদৃশ্য চেয়ারের ব্যবস্থা।  বন বাংলার ডান দিকে কাঁটাতারের বেড়ার বাহিরে একটু দূরে বেড়া দিয়ে ঘেরা একটি অর্জুন গাছ। তার নিচে সল্ট পিট ।বন্য পশুদের নুন চাটার জায়গা। এরপর গহীন বনভূমি পাহাড়ের ঢাল বেয়ে উপরের দিকে উঠে গেছে। শিমলিপালের গভীর বন্যতার মাঝে এ যেন একটুকরো আধুনিকতা ।

বন্য পশুদের নুন চাটার জায়গা

আমাদের স্থান হয়েছে গেস্ট হাউসের ডরমিটরি তে। পাশেই একটা কাঠ চাঁপা ফুলের গাছ। সবুজ রঙের ফুলের অপূর্ব গন্ধে চারিদিক ম ম করছে। অনির্বাণ ,অভিজিৎ রেশনের ব্যাগ নিয়ে কিচেনে গিয়ে আগামী দুদিনের উদরপূর্তির ব্যবস্থা করে এলো। অভিজিতের সঙ্গে আগে ও পরে অনেক পাহাড়ে  বা জঙ্গলে গেছি কিন্তু শিমলিপালে অভিজিৎ যে ভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিশ্রম ও পরিচালনা করেছে তা  তুলনাহীন। পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে তার দায়িত্ব অভিজিৎ নিজের কাঁধে নিয়ে নিয়েছে। শিমলিপাল কে যেভাবে সুচারুভাবে আমরা উপলব্ধি করেছি তার মূল কান্ডারী অবশ্যই অনির্বাণ ও  অভিজিৎ।বেলা তিনটে নাগাদ মধ্যাহ্নভোজন সমাপ্ত করে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে বিশাল কম্পাউন্ডে উদ্দেশ্যহীনভাবে বিচরণ করলাম। কখনো আন্ডারপাসে নেমে ,কখনো বা ওয়াচ টাওয়ারে উঠে,আবার কখনো পাতাঝরা কাঠের বেঞ্চে বসে চিতল হরিণ,সম্বর,বড়া শিঙগা দের নুন চাটা দেখছিলাম।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো ।চা নিয়ে এলো কিচেন কর্মী সুদাম। মধ্যবয়স্ক ।অঙ্গুলে বাড়ি। ওর সাথে আমার ভ্রমণের পূর্বস্মৃতি লবঙ্গ ও টিকরপাড়ার কথা জানতে চাইলাম। সুদাম নিজেও সাতকোশিয়া গর্জ স্যাংচুয়ারি তে বেশ কিছুদিন কাজ করেছে। কথাপ্রসঙ্গে সল্ট পিট এর সামনের বেড়া দেওয়া ওই ঝাঁকড়া অর্জুন গাছটার কথা এলো। সুদাম বলল “বাবু ,ওই গাছটা ঠাকুরানীর গাছ।” ঠাকুরানী মানে উড়িয়ায় বনদেবী। “ওই গাছটা শুনেছি চাহালার সমস্ত জংলি জানোয়ার কে রক্ষা করে।” অন্ধকারাচ্ছন্ন কুসংস্কার এখানকার অধিবাসীদের রন্ধে রন্ধে। তবুও নিকষকালো ছায়াচ্ছন্ন বনভূমির পদপ্রান্তে বসে সুদামের কথাগুলি যেন বড় জীবন্ত ! বড় অনুভূতিপ্রবণ!

বহু পূর্বে শিমলিপালের এই চাহালা  ছিল ময়ূরভঞ্জ রাজাদের শিকার ক্ষেত্র। এখানেই উনারা তাঁবু ফেলতেন। পরে অবশ্য স্থায়ী শিকার স্থান নির্মাণ হয়েছিল। একদা এক রাজা তার অনুচর দের নিয়ে এখানে শিকারে এলেন। সঙ্গে বহু কর্মচারী যারা মূলত হাকোয়া ও স্টপারের কাজ করতেন।হাকোয়া হল যারা খোল করতাল বাজিয়ে ও তীব্র চিৎকার করে বন্যপশুদের   তাদের আস্তানা থেকে বের করে মাচায় বসা রাজা এবং তার মোসাহেবদের সামনে নিয়ে আসতো। আর স্টপার হলো যারা দু’ধারে গাছে গাছে বসে বন্যপ্রাণীরা যাতে অন্যদিকে না চলে যায় এইজন্য আওয়াজ বা তীর ধনুকের সাহায্যে পশুদের গতিপথ সর্বদা মাচার দিকে রাখার চেষ্টা করত। এরপর পশুরা মাচার সামনে এলে রাজা ও তার অনুচরেরা আয়েশ করে গুলি করে পশুগুলি কে হত্যা করত এবং নিজেদের বীরত্ব জাহির করতো।

কিন্তু সেবার হাকোয়ারা যখন হাঁক শুরু করলো, পশুগুলো দ্রুতগতিতে মাচার দিকে অগ্রসর হতে লাগলো ঠিক তখনই ওই গাছটি নাকি তীব্র বেগে আন্দোলিত হতে শুরু করলো এবং  দ্রুত আন্দোলন অন্যান্য পার্শবর্তী গাছে গাছে ছড়িয়ে পরলো। ভয়াবহ বজ্রবিদ্যুৎ সহ  ঝড় শুরু হল সঙ্গে তীব্র শিলাবৃষ্টি। শিলার আঘাতে রাজা ক্ষতবিক্ষত হয়ে বেঁচে গেলেও ,তার বহু অনুচর এবং কর্মীরা বজ্র ও শিলার আঘাতে মারা গেল। সেই রাতে ওই রাজা স্বপ্নাদেশে এই অর্জুনগাছের তলায় এক ভয়ঙ্করদর্শন দেবীমূর্তিকেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। এরপর থেকেই চাহালায় শিকার বন্ধ হয়ে যায় আর ওই গাছটি কে ঘিরে পূজার্চ্চনার ব্যবস্থা করা হয়। বাস্তবিকই শিমলিপাল অভয়ারণ্য হওয়ার অনেক আগে থেকেই এই চাহালার  শিকার বন্ধ হয়ে যায়। ‘চাহালা’ শব্দটির বাংলা মানে ‘টলে যাওয়া’। সাধারণ অধিবাসীরা বলতো ,”রাজার আসন টলি গেলা”। বর্তমানে ওই গাছটির নিকট পশুদের জন্য সল্ট পিট এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

রাত্রি বেশ ঘন হয়েছে। অনির্বাণ পাশে এসে বসলো। চন্দ্রালোকিত আবছায়ায় গাছটির দিকে তাকিয়ে গা ছমছম করে উঠলো। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ভেসে এল ভয়াল ভয়ঙ্কর রক্তজলকরা এক ডাক। সুদাম বলল” বাঘের ডাক, রাতের বেলাতেও শুনতে পাবেন। তবে এই বাংলোর কাঁটাতারের বেড়ার মধ্যে কখনো কোন বাঘ,হাতি,গৌড়, ভাল্লুক প্রবেশ করেনি। কিন্তু কখনো রাতে এই চৌহদ্দির বাইরে বেরোবেন না। টর্চ হাতে রাখবেন। এখানে কিন্তু সাপের বেশ উপদ্রব আছে। “

একদিকে বনবিবির আখ্যান, বাঘের ডাক, বিষধর সাপের আতঙ্ক আবার চতুর্দিকে তীব্র মিষ্টি বসন্তকুঞ্জ এর সুবাস, শির শিরে ঠান্ডা বাতাস, খই ফোটা জোৎস্নায় আমরা কজন অপার্থিব শিহরনে বিহ্বল।

বন বাংলোর আঙিনায়

চাহালায় সকাল এল ঘুমভাঙ্গানিয়া  পাখিদের সুমধুর কলতানে। গাছে গাছে তখন পাতা ফুল পাখিদের হোলির উচ্ছ্বাস। বেগুনি মৌটুসী,কালচে নীল কোয়েল, কালচে লাল স্কারলেট, সবজে লাল রঙা ময়না ,নীল ঠোঁট ওয়ালা ট্রজেন,হলুদ রঙা মিনিভেট, রংবেরঙের কাঠঠোকরা , বেনেবউ , দুর্গাটুনটুনি,মোহনচুড়া, বুলবুলি এর দল। মনে হল এত রঙের উরাউড়ির মাঝে আমরাও কখন যেন রঙিন আবিরে ভরে গেছি ।অনির্বাণ ক’দিন শুধু একটা কথাই  শুনিয়েছে, “আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ রংগুলি আমি এইবারে ফ্রেম বন্দি করলাম”। প্রকৃতির রং আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বন্যতার নেশা এনে দিল। আমাদের বাঁধনহারা, বর্ণচোরা মন গুলি প্রকাশিত হওয়ার জন্য উন্মুখ। যথারীতি কাঁটাতার আমাদের বেঁধে রাখতে পারল না। দ্রুত ঢুকে পড়লাম কোর এরিয়ায়। এই সকালে ও চারি দিকে ক্রমাগত ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, ধীরে ধীরে সূর্যের আলোও  প্রবেশাধিকার পাচ্ছে না। হাতে দূরবীন ও ক্যামেরা। রাতের বাঘের ডাক যেন অতীত । বাইসন,বুনো হাতি, ভাল্লুক যেন আমাদের আত্মবিশ্বাসে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। এগিয়ে চলেছি যেন আদিম প্রকৃতির মাঝে আত্ম বলিদান এর উদ্দেশ্যে। কবিগুরুর ভাষা একটু পরিবর্তন করে বলতে ইচ্ছে হলো – আমার সকল নিয়ে চলেছি সর্বনাশের আশায়।

হঠাৎ ড্রাইভার ও সাবধানী বাসবদার  চিৎকার “ওদিকে যাওয়ার অনুমতি নেই, ফিরে আসুন”। ছুটে  আসছে একজন সশস্ত্র দ্বাররক্ষী ও সুদাম। এ যেন একদল স্কুল পালানো ছেলেকে ঘাড় ধরে পুনরায় কাঁটাতারের বেড়ার মধ্যে ঢুকিয়ে বোঝানোর পালা। যতই ছবি তোলার কথা বলি ততই ওরা ছবি হয়ে যাওয়ার ভয় দেখায়।

দুপুরে সুদাম আমাদের পনগোস রান্না করে খাওয়ালো। পনগোস এর বাংলা মানে এঁচোর ।সুদাম কে অনেক অনুরোধ করলাম গাড়ি নিয়ে কোর  এরিয়ায় ঢোকার পারমিশন জোগাড় করার জন্য কিন্তু গরুমারার গরাতির মতন এ ও নিষ্ফলা হল।কারণ পুরোটাই বাঘের রাজত্ব ।অগত্যা দুপুরের পর দিক থেকে এসেছিলাম সেই দিকেই গাড়ি নিয়ে ধীরে ধীরে এগোলাম ।ঘন জঙ্গল ছাড়িয়ে বাম দিকে ঘুরতেই চোখে পরলো বেশ কিছুটা ফাঁকা অঞ্চলে পাতাঝরা সাদাটে গেণ্ডুলি ও হটজায়ি  গাছের সমাহার।মাঝে একখানি লম্বাটে নালা আর তার দুই ধারে অজস্র ময়ূর ময়ূরী ।যেন রঙের আঁতুরঘর ।মনে হলো কাছে যাই,কিন্তু ড্রাইভার বারণ করলো,এই নালাটা নাকি সাপের ও আঁতুর ঘর। সদ্য সাপের ছানাগুলোকে ময়ূরগুলি  পরমানন্দে ভক্ষণ করে চলেছে। সাঁজের রং লেগেছে আকাশে।বাসবদা গুনগুন করে গাইছে

“এই গোধূলির ধুসরিমায়

শ্যামল বনের সীমায় সীমায়,

শুনি বনে বনান্তরে

অসীম গানের রেশ ।”

সত্যি রবীন্দ্রনাথ না থাকলে আমারা যে কি ভাবে মনের ভাব প্রকাশ করতাম কে জানে ?

ধীরে ধীরে সাঁজের আলো মুছে শিমলিপালের বুকে নামছে নিথর রাত্রি। গাড়ির হেডলাইট সেই গাঢ়তাকে ছিঁড়ে আমাদের নিয়ে চলেছে যেন কোন অব্যক্ত আদিমতার চরাচরে ।

আজ বিদায় রজনী।রাতে খাওয়ার পর্ব চুকিয়ে শেষ বারের মতন কাঠের চেয়ার এ বসলাম, অর্জুন গাছ টির দিকে তাকালাম ।চাঁদের আলোয় কেমন মায়াময় ।বিন্দু বিন্দু জোনাকি যেন অর্জুনের মাথার হীরকদ্যুতি ।বিদায় বন দেবী ।

দূরে কাজ শেষে সুদামরা গান ধরেছে

“ফুলরসিযা রে মন মোর ছুঁই ছুঁই যা

তোর লাগি বিকশি চাইছে কুঞ্জে

কুঞ্জন দে ই যা যা……..

যা না রে ফেরি আশি পাশে যা না

গা মন ভরি কর না তু মনা ……”

কোথায় যেন বাংলা উড়িয়া একাকার হয়ে গেল। শিমলিপাল, তুমি আমার মন ছুঁয়ে থাকবে চিরকাল ।

রঙমিতালী

একরাশ মন খারাপ নিয়ে ভোর এলো । আসার মতন যাওয়াও তো আমাদের জীবনের ভবিতব্য। চাহালাকে বিদায় জানিয়ে এগিয়ে চললাম খৈরী নালা কে পাশে রেখে  খৈরী চেকপোস্টের উদ্দেশ্যে। এ কদিন নিবিড়ভাবে অনুভব করেছি প্রকৃতির আত্মিক তান। আজ উতলা মনের সঙ্গে উদাসী দখিনা বাতাসের বিদায় আলিঙ্গন চলেছে। আজ  রক্তপলাশের ঝোপ তার যাবতীয় অবগুন্ঠন খুলে দিয়েছে। শুধু রক্তপলাশ কেন, মাদার ,শিমুল পথপাশে পদপ্রান্তে নীল আকাশের পটভূমিতে শুধুই আগুনে লাল এর আয়োজন। হৃদয়ের রক্তক্ষরণ এর সঙ্গে আজ তার রঙমিতালী। অবশেষে চেকপোষ্টে এসে সরকারিভাবে শিমলিপালের সঙ্গে বিচ্ছেদের স্ট্যাম্প মেরে এগিয়ে চললাম জোশীপুরের উদ্দেশ্যে।বিদায় শিমলিপাল।

জোশীপুর ও বারিপদার মধ্যবর্তী NH49 হাইওয়ে যেন আক্ষরিক অর্থেই রূপের খনি। আগুনে রক্তপলাশ এর মাঝে ঢেউ খেলানো কালো পিচের মসৃণ রাস্তা মালভূমির পাহাড়টিলার বুক চিরে এঁকেবেঁকে মান্দা, বিশয়ি কে পিছনে ফেলে পাকদন্ডীর বাঁকে বাঁকে পেলাম দুয়ারসিনি দেবীর মন্দির ,বাংরিপোসির বনবাংলো, বুড়িবালাম নদীর দর্শন। এক সময় যাত্রা সাঙ্গ হল বারিপদায়। এরপর বাসে করে বালাসোরে। তারপর যথারীতি উঠে পড়লাম হাওড়াগামী ট্রেনে।

সাঙ্গ হল আমাদের এবারের দোলযাত্রা। আদিমতার নিকট থেকে পুনরায় সভ্যতার দিকে যাত্রা। সঙ্গে নিয়ে চললাম শিবু, সুদামদের আন্তরিকতা, বুনো ধামসা মাদলের সুর, প্রকৃতি বাঁশির  অপূর্ব সুর – যা বুকে উথালি পাথালি ঢেউ তোলে – সে যে ভালোবাসার সুর। এই সুরেই তো আমরা বন্ধুকে চিনি,প্রতিবেশীকে চিনি, প্রকৃতিকে চিনি, দেশকে চিনি।

আমাদের স্কুলের ভোলাস্যার বলতেন “দেশ ত শুধু ভৌত নয়, মানবিকও, মানসিকও।” তার স্পর্শের সঙ্গে তো আমাদের প্রত্যেকের আত্মিক অনুভব।

বন্ধুরা, আমার এই কুড়িয়ে আনা জংলী মণি-মাণিক্যের  সবটুকুই আপনাদের অনুভবে দিলাম। ভালো থাকবেন। আবার দেখা হবে কোন এক জংলি পথের বাঁকে, কোন এক সিঁদুররাঙা মন কেমনের বিকেলে। বিদায় । (ক্রমশঃ)

পুনশ্চঃ শিমলিপাল থেকে ফেরার কয়েক মাস পরেই খবরের কাগজে একটি খবর দেখলাম। মাওবাদীরা চাহালা বাংলোকে আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে। বেশ কিছু বনকর্মীরা প্রাণও গেছে । সুদামের কথা মনে পড়লো ।মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। মনে মনে সেই অর্জুন গাছের কাছে প্রার্থনা করলাম যারা প্রকৃতিকে ধ্বংস করতে চায়,সুন্দর কে ধ্বংস করতে চায়, তাদেরকে কোনদিন তুমি ক্ষমা কর না।


0 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!